ধুনটে আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২৫


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০২১, ৮:২৫ অপরাহ্ন / ৫২০
ধুনটে আ.লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২৫

ফজ‌লে রাব্বী মানু, ধুনট ( বগুড়া )প্রতি‌নি‌ধিঃ
বগুড়ার ধুনট উপজেলার আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের লাঠি চার্জ, ১০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে। সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে।

শনিবার সকাল ১১টার দিকে ধুনট উপজেলা পরিষদ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  

সংঘর্ষে আহতরা হলেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দৌলা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া খন্দকার, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হারুন বাবু, চিকাশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সাজেদুল ইসলাম, যুবলীগের সদস্য সুজন, বলয় মন্ডল, ছাত্রলীগের সদস্য রাজু সুলতান, রুবেল বাবু, আরিফ, নাসিম, হৃদয়, আকাশ এবং অপরপক্ষে পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুজন সাহা, পৌর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস ছাত্তার ও যুব শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীনুর আলম।

এছাড়া দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে ধুনট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ কুমার বর্মন, এসআই মজিবর রহমান, পুলিশ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন ও সবুজ মিয়া আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, তিন মাস ধরে উপজেলা পরিষদের সরকারী বরাদ্দের অর্থ বন্টন নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের সাথে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরোধ রয়েছে। এক পর্যায়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারমান আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসকের নিকট অনাস্থা প্রস্তাবের প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য শনিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের হল রুমে বৈঠকে বসেন। এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের পক্ষের নেতাকর্মীরা ওই বৈঠকটি ভন্ডুল করার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে এই ঘটনাটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ধুনট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন বলেন, আমাকে অনাস্থা প্রস্তাবের কোন বিষয় ছিলা না। উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ বন্টনে দলীয় ভাগ নিয়ে সংসদ সদস্যর সাথে আমার বিরোধ রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে শুক্রবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের নেতাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকের সিন্ধান্ত মোতাবেক সকল সমস্যা সমাধান করার জন্য শনিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদের হল রুমে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছিল। এর আগেই সংসদ সদস্যর ছেলে আসিফ ইকবাল সনির নেতৃত্বে আমার নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে।

বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্যর ছেলে ও ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসিফ ইকবাল সনি বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকনের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগন অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহনের জন্য বৈঠক করছিলেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহসীন আলমের সাথে নেতাকর্মীদের নিয়ে আমি পরিষদের বাইরে অবস্থান করছিলাম। এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতাকর্মীরা আমার নেতাকর্মীর উপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট নিক্ষেপ ও লাঠি চার্জ করা হয়েছে। পরিবেশ নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে পুলিশের ৪ সদস্য আহত হয়েছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যানদের মধ্যে পরিষদের নামে বরাদ্দকৃত উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বন্টন নিয়ে বিরোধ চলছে। একারণে উপজেলা পরিষদের পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খোকন গত তিন মাস ধরে সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থিত থাকেন না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যানগন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নিকট অনাস্থা প্রস্তাবের প্রস্তুতি নিয়েছেন।