বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে নানামুখী কর্মসূচি ও গ্রেফতার


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০২২, ৯:৪৩ অপরাহ্ন / ৩৫০
বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে নানামুখী কর্মসূচি ও গ্রেফতার

তানবির আলম খানঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির ব্যানারে উপাচার্য, প্রক্টর, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৬ শতাধিক অংশগ্রহণকারীর উপস্থিতিতে উক্ত মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান, বঙ্গমাতা হল প্রভোস্ট সহকারী অধ্যাপক বাদল মনি, রাসেল হল প্রভোস্ট সহকারী অধ্যাপক ফায়েকুজ্জামান, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সাবেক উপাচার্য (রুটিন) অধ্যাপক ড. শাহজাহান, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহাবুবসহ অন্যান্য শিক্ষকগণ।

এসময় বক্তারা দ্রুত ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও আন্দোলনে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর আহ্বান জানান। বক্তারা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকরী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

অধ্যাপক ড. শাহজাহান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী সন্ধ্যার পরে কেন বাইরে যেতে পারবে না তা বোধগম্য নয়। শিক্ষার্থীরস যে কোন সময়, যে কোন জায়গায়, যে কোন প্রয়োজনে যেতে পারেন এই নিশ্চয়তা আমরা চাই। আমি সকলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার দাবি জানাই।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কিউ. এম মাহাবুব বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারী, এখানকার এলাকাবাসী ও প্রশাসন সবাই আমরা একাট্টা। ইনশাআল্লাহ এই আন্দোলন যেন সারা বাংলাদেশে দৃষ্টান্তমূলক হয় এবং ফলপ্রসূ হয়, ভবিষ্যতে এমন আন্দোলন যেন আর না করতে হয় তাঁর নিশ্চয়তা ও অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’

প্রসঙ্গত, ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত রাত ১০ টার দিকে গোপালগঞ্জের নবীনবাগ এলাকায় ৬-৭ জন স্থানীয় বখাটে দ্বারা বশেমুরবিপ্রবির এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা সেইদিন রাত থেকেই রাস্তায় বের হয়ে পদযাত্রা মিছিল, থানা ঘেরাও, সড়ক অবরোধসহ লাগাতার আন্দোলন-অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে দেশীয় অস্র নিয়ে কিছু স্থানীয় দূর্বৃত্তরা হামলা চলালে ঘটনায় উপাচার্যসহ শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আহত হয়।

অন্যান্য কর্মসূচিঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সার্বক্ষণিক অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও মিছিল আয়োজন করে।

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বশেমুরবিপ্রবিতে সংবাদ সম্মেলন, ঢাকার শাহবাগে বশেমুরবিপ্রবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন, রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাষ্কর্যের পদদেশে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সমাবেশ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেন। কর্মকর্তা সমিতির দ্রুত বিচারের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি ও আন্দোলননে একাত্মতা প্রকাশ করেন।বশেমুরবিপ্রবি মাস্টাররোল কর্মাচারিরা দ্রুত শাস্তির দাবি জানান ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। শুক্রবার রাতে ধর্ষণের প্রতিবাদে বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল হয়।

শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭ টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন, চোখে কালোকাপড় বেধে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের প্রতিবাদ করেন।

৬ জন আটক ও র‍্যাবের সংবাদ সম্মেলনঃ
এদিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আজ শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আটককৃত ৬ জনকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব। বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী গণধর্ষণের ঘটনায় আটককৃত ঐ ৬ জনের নাম প্রকাশ করে র‍্যাব। তারা হলেন, রাকিব মিয়া ওরফে ইমন (২২), মো: হেলাল (২৪), তূর্য মোহস্ত (২৬),
পিয়াস ফকির (২৬), মো: নাহিদ রায়হান (২৪), প্রদীপ বিশ্বাস (২৪)।

এদেরকে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা রাকীব মিয়ার নেতৃত্বে একটি স্থানীয় অপরাধ চক্র, তারা প্রায়ই সন্ধ্যার পর আড্ডা দেয়, মাদক সেবন করে এবং এক পর্যায়ে আলোচিত ঐ ধর্ষণ অপরাধ সংগঠিত করেন। আগেও তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিলো। ধর্ষণের ঘটনার দিন তারা ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুর পথরোধ করে, ভুক্তভোগীর বন্ধুকে মারধর করে ও ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। র‍্যাব জানায় এদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।