বৃদ্ধাশ্রম নয় পরিবার হোক আসল ঠিকানা


প্রকাশের সময় : মার্চ ১২, ২০২১, ৭:২৮ অপরাহ্ন / ৫২৪
বৃদ্ধাশ্রম নয় পরিবার হোক আসল ঠিকানা

মোঃ আলমগীর হোসেন

বৃদ্ধাশ্রম বলতে বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য পরিবার ও স্বজনদের থেকে আলাদা আবাস বা আশ্রয়ের নাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের তাঁদের সন্তানদের উপর নির্ভরশীলতা বাড়তে থাকে এবং সেটাই স্বাভাবিক। এই নির্ভরতা যে সব সময় মসৃন সুন্দর ও আত্মসম্মান বজায় রেখে হয়ে থাকে তা নয়।অনেকেই সন্তানের বোঝা হয়ে থাকার গ্লানি নিয়েই বাকি জীবনটুকু বেঁচে থাকতে হয়।বয়স্ক বলতে আমরা কাদের বুঝি? দেশকালের তারতম্যে এই সংজ্ঞার পরিবর্তন হয়।আমাদের দেশে বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে অবসরের বয়স বিভিন্ন। তবে সাধারন ভাবে ষাট বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষকে বয়স্ক ধরা হয়।

বাস্তব ক্ষেত্রে বৃদ্ধাশ্রম নামটি শুনলে চোখের সামনে ধরা দেয় ক্রন্দনরত মায়ের মুখ,অসহায় বাবার দূর্বল চাহনি।এ যেন জীবনের পরম অভিশাপ। সারাজীবন নিজের ছেলে-মেয়েদের বড় করে তুলে শেষ জীবনে সন্তানকে অবলম্বন করে বাঁচার চেষ্টা যেন অন্যায়।দিনে দিনে এর প্রভাব বেড়েই চলেছে।
আমাদের দেশে অধিকাংশ প্রবীণ পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন এবং তাদের ভরনপোষণ, চিকিৎসা ইত্যাদির ভার সন্তানের ওপর বর্তায়।কিন্তু বর্তমানে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নানা পরিবর্তনের যৌথ পরিবারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।একান্নবর্তী পরিবার বা যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এতে প্রবীনরা তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার অর্থাৎ আশ্রয় হারাচ্ছে। এতে করে বৃদ্ধ পিতামাতা নানা সমস্যা ভোগেন।

ছোটবেলায় যে মা-বাবা ছিলেন সন্তানের সবচেয়ে বেশি আপন যাদের ছাড়া সন্তান কিছুই করতে পারতো না।যারা নিজেদের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে সন্তান কে মানুষ করেছেন, সব-দুঃখ বুকে চেপে রেখে সন্তানের হাসিমাখা মুখ দেখার জন্য যে মা ব্যাকুল থাকতেন ,সন্তান না খেলে যিনি খেতেন না, সন্তান না ঘুমালে যিনি ঘুমাতেন না,অসুস্থ হলে যিনি ঠায় বসে থাকতেন সন্তানের শিয়রে।সেই মা-বাবার শেষ বয়সের ঠিকানা এখনকার বৃদ্ধাশ্রমগুলো। এ যেন মানবতার এক চরম উপহাস। আজকাল বহু শিক্ষিত,বুদ্ধিজীবী ও চাকুরীজীবি সন্তান মা-বাবাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না।মা-বাবাকে ঝামেলা মনে করেন। তাদের রেখে আসছে বৃদ্ধাশ্রমে। কখনও কখনও অবহেলা ও দুর্ব্যবহার করে এমন এক অবস্থান সৃষ্টি করে যেন তারা নিজেরাই ভিন্ন কোনো ঠাঁই খুঁজে নেন। অনেকের অর্থের অভাব না থাকলে ও মামা-বাবাকে কিছু অর্থ ও সময় দেন না। এমনকি তাদের সঙ্গে কথা বলার মতো পর্যাপ্ত সময় ও তাদের নেই।

আমরা যারা বৃদ্ধ পিতামাতা কে অবহেলা করছি,তাদের বোঝা মনে করছি, বৃদ্ধাশ্রমে তাদের ফেলে রাখছি।আমরা কি কখনো ভেবে দেখছি আমরা একদিন বৃদ্ধ হবো! আমাদের সন্তানরা যদি আমাদের সাথে এরকম করে।পিতা-মাতারা কখনো তাদের সন্তান কে বোঝা মনে করেন না। সন্তানদের বড় করে তোলার জন্য তারা বিন্দু পরিমান ত্রুটি করেনা। কত যত্ন করে বুকে লালন- পালন করেছেন। মা প্রতিটি সন্তানের কতই না কষ্ট করেছেন।গর্ভ ধারণ থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত মা সন্তানদের জন্য যে কষ্ট করেছেন, তার ঋন কোনদিন শোধ করা সম্ভব নয়।অপরদিকে বাবা ও তাদের সন্তানের সুখের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন।

তাদের চাওয়া তো বেশি নয়। তারা শেষ বয়সটা নাতি-নাতনি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে চান।আমরা কেন বুঝতে পারিনা, আজকের আমি কয়দিন পরেই বৃদ্ধ হবো!আমরা কি কখনো ভেবে দেখছি,আমি বৃদ্ধ হলে আমার আশ্রয় কোথায় হবে? “আপনি জীবনে প্রথম হাঁটা শিখেছিলেন বাবা- মায়ের হাত ধরে তেমনি আপনার বাবা-মা’র জীবনের শেষ হাঁটা যেন হয় আপনার হাত ধরে”। তাই বৃদ্ধাশ্রম নয় ,পরিবার হোক আসল ঠিকানা।

লেখকঃ শিক্ষার্থী , ইতিহাস বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ